মালভূমি কাকে বলে? মালভূমির বৈশিষ্ট্য | মালভূমির শ্রেণীবিভাগ:

মালভূমি কাকে বলে? মালভূমির বৈশিষ্ট্য | মালভূমির শ্রেণীবিভাগ:

মালভূমি কাকে বলে?

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩০০-৬০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত, চারপাশে খাড়া ঢাল যুক্ত, উপরিভাগ তরঙ্গায়িত এবং সুবিস্তৃত ভূমিকে মালভূমি বলে। স্থলভাগের ৩০% এলাকা হল মালভূমি।

উদাহরণ—

  • ভারতে দাক্ষিণাত্য, ছোটোনাগপুর, মেঘালয়।
  • চিনের তিব্বত (বৃহত্তম), পামির (উচ্চতম), ছয়ডাম।
  • তুরস্কের আনাতোলিয়া।
  • ইউকন।
  • কলম্বিয়া।
  • ইথিয়োপিয়া।
  • ফিজেন্ড মালভূমি।

মালভূমির বৈশিষ্ট্য:

  • মালভূমি হল একটি বহুদূর বিস্তৃত উচ্চভূমি।
  • মালভূমি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সাধারণত ৩০০ থেকে ৬০০ মিটার উচ্চতার মধ্যে অবস্থান করে।
  • মালভূমির উপরিভাগ কিছুটা তরঙ্গায়িত বা উঁচু নিচু হয়।
  • মালভূমির চতুর্দিক খাড়া ঢাল যুক্ত হয়।
  • মালভূমির উপরিভাগ কিছুটা তরঙ্গায়িত বা প্রায় সমতল এবং চতুর্দিক খাড়া ঢাল বিশিষ্ট বলে একে দেখতে অনেকটা টেবিলের মত হয়। তাই মালভূমিকে টেবিল ল্যান্ড বলা হয়।
  • মালভূমির উপরিভাগে ছোট ছোট পাহাড় অবস্থান করতে পারে।
  • মালভূমি বয়সে প্রাচীন ও নবীন উভয় ধরনের হতে পারে।

মালভূমির শ্রেণিবিভাগ:

উৎপত্তি অনুসারে মালভূমি ৩ টি শ্রেণিতে বিভক্ত— ভূগাঠনিক মালভূমি, ক্ষয়জাত মালভূমি ও সঞ্চয়জাত মালভূমি।

পর্বতবেষ্টিত মালভূমি কাকে বলে? (Intermontane Plateau):

গিরিজনি আলোড়নের ফলে ভঙ্গিল পার্বত্য অঞ্চলের চারপাশে পর্বত ঘেরা যে সুউচ্চ ও বৃহদাকার মালভূমি সৃষ্টি হয়, তাকে পর্বত বেষ্টিত মালভূমি বলে।

পর্বতবেষ্টিত মালভূমির বৈশিষ্ট্য:

  • পর্বত বেষ্টিত মালভূমি চতুর্দিকে পর্বত দ্বারা বেষ্টিত বা ঘেরা থাকে।
  • এই ধরণের মালভূমির উচ্চতা অন্যান্য মালভূমির থেকে বেশি হয়।
  • এই ধরণের মালভূমি বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে অবস্থান করে।
  • এই ধরনের মালভূমি নবীন ভঙ্গিল পর্বত অঞ্চলের সৃষ্টি হয়।
  • এই ধরনের মালভূমি পাললিক শিলা দ্বারা গঠিত হয় এবং পাললিক শিলা দ্বারা গঠিত হয় বলেই এই মালভূমির শিলাস্তরের জীবাশ্ম থাকতে পারে।

উদাহরণ—
এশিয়ায় হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে লাদাখ, তিব্বত (হিমালয় ও কুয়েনলুন), ছয়ডাম (কুয়েনলুন ও আলতিনভাগ), ইউনান, ইরান (এলবুর্জ ও জাগ্রোস), আনাতোলিয়া (পন্টিক ও টরাস) মালভূমি।

লাভা গঠিত মালভূমি কাকে বলে? (Lava Plateaus):

ভূগর্ভস্থ ম্যাগমা কয়েকবার বিদার অগ্ন্যুৎপাতের মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠে নির্গত হয়ে বিস্তৃত অঞ্চলে লাভারূপে সঞ্চিত হয়ে চ্যাপটা শীর্ষদেশযুক্ত যে মালভূমি গড়ে ওঠে, তাকে লাভা মালভূমি বলে। অগ্ন্যুৎপাতের মাধ্যমে লাভা সঞ্চয়ের ফলে এটি গঠিত হওয়ায় একে আগ্নেয় বা সঞ্চয়জাত মালভূমিও বলা হয়। এগুলি খনিজ সম্পদ সমৃদ্ধ হয়।

লাভা গঠিত মালভূমির বৈশিষ্ট্য:

  • লাভা জমাট বেঁধে লাভা মালভূমি সৃষ্টি হয়।
  • লাভা মালভূমির উপরিভাগ সমতল টেবিলের মত বা সামান্য চ্যাপ্টা হয়।
  • এই জাতীয় মালভূমি ব্যাসল্ট জাতীয় লাভা শিলা দ্বারা গঠিত হয়। তাই এই মালভূমির রং কালো হয়।
  • একাধিকবার লাভা সঞ্চয়ের দ্বারা  সৃষ্টি হয় বলে এই মালভূমির প্রান্তভাগে সিঁড়ির মত ধাপ দেখা যায়।

উদাহরণ—
 ভারতে ডেকান ট্রাপ, মালব মালভূমি।

লাভা গঠিত মালভূমি সৃষ্টির পদ্ধতি:

ভূ-অভ্যন্তরে উত্তপ্ত ও গলিত পদার্থ ভূত্বকের কোনো ফাটলের মধ্য দিয়ে বের হয়ে ভূপৃষ্ঠে সঞ্চিত হয়। বহুবছর ধরে এই লাভা ঠান্ডা ও কঠিন হতে থাকে। পরবর্তী সময়ে উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে লাভা মালভূমি গঠন করে। এই মালভূমি লাভা সঞ্চয়ের ফলে সৃষ্টি হয় বলে একে সঞ্চয়জাত মালভূমিও বলে।

ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি কাকে বলে? (Dissected Plateaus):

প্রাচীন ও সুবিস্তৃত মালভূমি বা উচ্চভূমি দীর্ঘকাল নদনদী দ্বারা ক্ষয়প্রাপ্ত ও বিচ্ছিন্ন হয়ে কঠিন শিলায় গঠিত যে ছোটো মালভূমি সমউচ্চতায় অবস্থান করে, তাকে ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি বলে।

ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমির বৈশিষ্ট্য:

  • ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি কঠিন ও প্রাচীন শিলা দ্বারা গঠিত।
  • এই ধরনের মালভূমির উচ্চতা অন্যান্য মালভূমির তুলনায় অনেক কম হয়।
  • এই ধরনের মালভূমিগুলির প্রায় সমান উচ্চতা বিশিষ্ট।
  • বিভিন্ন খরস্রোতা নদী দ্বারা এই মালভূমিগুলি পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে।

উদাহরণ — 
ভারতে বুন্দেলখণ্ড, মালনাদ, হাজারিবাগ, মেঘালয়, পুরুলিয়া মালভূমি।

মহাদেশীয় মালভূমি কাকে বলে? (Continental Plateaus):

ভূত্বকের প্রাচীন অংশগুলি বিচ্ছিন্ন হয়ে সুবিস্তৃত মহাদেশ জুড়ে সুস্থায়ী যে প্রাচীন মালভূমি গড়ে ওঠে, তাকে মহাদেশীয় মালভূমি বলে। এই মালভূমি ঢাল বা বর্মের মতো অত্যন্ত কঠিন ও সুস্থায়ী। তাই একে শিল্ড মালভূমি (Shield Plateaus) -ও বলে।

মহাদেশীয় মালভূমির বৈশিষ্ট্য:

  • ভূ-আলোড়নের প্রভাবে এই ধরনের মালভূমি সৃষ্টি হয়।
  • এই ধরনের মালভূমিগুলি প্রাচীন গ্রানাইট ও নিস শিলা দ্বারা গঠিত হয়।
  • এই ধরনের মালভূমিগুলির শিলার বয়স ১০০ কোটি বছরেরও বেশী।
  • প্রাচীন আগ্নেয় ও রূপান্তরিত শিলায় গঠিত বলে এই মালভূমিগুলি খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ।
  • এই মালভূমিগুলি শিল্ড নামেও পরিচিত।

উদাহরণ — 
সারা পৃথিবীতে মোট ১২ টি মহাদেশীয় আছে।

  • এশিয়াতে (৪ টি) দাক্ষিণাত্য শিল্ড (ভারত), আরব শিল্ড, ইন্দো – চিন শিল্ড ও সাইবেরিয়ান শিল্ড (বৃহত্তম শিল্ড মালভূমি)।
  • ইউরোপে (১ টি) বাল্টিক শিল্ড।
  • ওশিয়ানিয়াতে (১ টি)।
  • পশ্চিম অস্ট্রেলীয় শিল্ড।
  • কুমেরুতে (১টি)।
  • আন্টার্কটিকা শিল্ড।
  • দক্ষিণ আমেরিকাতে (২ টি) গিনি ও ব্রাজিল শিল্ড।
  • আফ্রিকাতে (২ টি )।
  • দক্ষিণ আফ্রিকা ও সাহারা শিল্ড।
  • উত্তর আমেরিকাতে (১ টি) কানাডীয় বা লরেন্সীয় শিল্ড।

Post Comment

close