সমভূমি কাকে বলে? সমভূমির শ্রেণীবিভাগ ও বৈশিষ্ট্য:

সমভূমি কাকে বলে? সমভূমির শ্রেণীবিভাগ ও বৈশিষ্ট্য:

সমভূমির শ্রেণিবিভাগ স্থলভাগের যেসব বিস্তীর্ণ এলাকা সমুদ্রপৃষ্ঠের চেয়ে সামান্য উঁচু (৩০০ মিটারের কম) এবং সামান্য ঢেউ খেলানো, সেই ভূভাগকে সমভূমি বলে।

সমভূমি শ্রেণীবিভাগ করো:

বিভিন্ন ধরনের সমভূমিগুলি হল—

পলিগঠিত সমভূমি:

সাধারণত নদী দ্বারা বয়ে আসা পলি, বালি কাদা ইত্যাদি নদীর দু – পাশে বা মোহানায় সঞ্চিত হয়ে পলিগঠিত সমভূমি গঠিত হয়।

উদাহরণ: সিন্ধু-গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্রের সমভূমি।

লাভা গঠিত সমভূমি:

ভূগর্ভের উত্তপ্ত তরল পদার্থ ভূপৃষ্ঠের ফাটল বা দুর্বল স্থান দিয়ে বাইরে বেরিয়ে ভূপৃষ্ঠের বিস্তীর্ণ অংশে জমাট বেঁধে লাভা সমভূমি গঠিত হয়। উদাহরণ: আইসল্যান্ডের সমভূমি।

লোয়েস সমভূমি:

মরু অঞ্চলের অতিসূক্ষ্ম বালুকণা বায়ুর দ্বারা বয়ে গিয়ে অনেক দূরে কোনো নীচু স্থানে দীর্ঘদিন ধরে সঞ্চিত হয়ে লোয়েস সমভূমি গঠন করে।উদাহরণ: গোবি মরুভূমির লোয়েস দ্বারা চিনের হোয়াংহো নদী অববাহিকায় লোয়েস সমভূমি গড়ে উঠেছে।

মানব জীবনের সমভূমি প্রভাব আলোচনা কর:

মানবজীবনে সমভূমির প্রভাব বা গুরুত্ব অপরিসীম। সমভূমি মানবজীবনকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে,

এগুলি হল—

  • কৃষিকাজের সুবিধা: অধিকাংশ সমভূমি উর্বর পলি দ্বারা গঠিত হওয়ায় কৃষিকাজ অত্যন্ত ভালো হয়।
  • উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা: ভূমিরূপ সমতল হওয়ায় রেলপথ, সড়কপথ ও জলপথের মাধ্যমে সমভূমি অঞ্চলে উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে।
  • শিল্পের বিকাশ: কৃষিসমৃদ্ধ ও উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থার কারণে এখানে বিভিন্ন শ্রমশিল্প ও কৃষিভিত্তিক শিল্পের বিকাশ ঘটেছে।
  • পানীয় জল ও সেচের জলের সুবিধা: বেশিরভাগ সমভূমির ওপর দিয়ে বড়ো বড়ো নদী প্রবাহিত হওয়ায় পানীয় জল বা সেচের জল পেতে অসুবিধা হয় না। ফলে সমভূমিতে জনবসতি খুব বেশি হয়।
  • জীবনযাপনের অনুকূল পরিবেশ: সমভূমি জীবনযাপনের পক্ষে অত্যন্ত অনুকূল বলে পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষ সমভূমিতে বাস করে।
  • বসতি নির্মাণ: শিল্প, ব্যাবসাবাণিজ্যের সুবিধার জন্য সমভূমিতে বহু প্রাচীনকাল থেকেই নানা ধরনের শহর, নগর, জনপদ গড়ে উঠেছে।
  • অন্যান্য গুরুত্ব: সমভূমি অঞ্চলে যেসমস্ত জমিতে চাষবাদ হয় না সেই সমস্ত জমিতে পশুপালন ক্ষেত্র গড়ে তোলা সুবিধাজনক।

সমভূমির বৈশিষ্ট্য:

সমভূমির বৈশিষ্ট্যগুলি হল—

  1. সমভূমির বেশিরভাগ অংশই সমতল হয়।
  2. স্থলভাগের তিনপ্রকার ভূমিরূপের মধ্যে সমভূমির আয়তন পার্বত্য অঞ্চলের তুলনায় বেশি।
  3. পৃথিবীর অধিকাংশ সমভূমি নদী উপত্যকা ও সমুদ্র উপকূলে গড়ে উঠেছে।
  4. সমভূমি ধীরে ধীরে ঢালু হয়ে সমুদ্রের সঙ্গে মিশে যায়।
  5. সমভূমির উচ্চতা সাধারণত সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩০০ মিটারের কম হয়।
  6. সমভূমিগুলি সাধারণত পলিমাটি দিয়ে গঠিত হওয়ায় যথেষ্ট উর্বর হয়।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *