ভক্তি হল একটি আদর্শ। বেদ, উপনিষদ, পুরাণ প্রভৃতি প্রাচীন হিন্দু ধর্মশাস্ত্রসমূহে ভক্তিবাদী আদর্শের উল্লেখ পাওয়া যায়। এই ভক্তির আদর্শের ওপর ভিত্তি করে মধ্যযুগে ভারতে হিন্দুধর্মে জাতপাত, কুসংস্কার ও রক্ষণশীলতার বিরুদ্ধে এক ধর্ম ও সমাজসংস্কার আন্দোলন বিকশিত হয়। এটি সাধারণভাবে ভক্তিবাদ বা ভক্তিবাদী আন্দোলন নামে পরিচিত।
ভক্তিবাদের মূলনীতি বা আদর্শ:
মূলকথা: 'ভক্তি' শব্দটির উৎপত্তি 'ভজ' ধাতু থেকে। 'ভক্তি' বলতে বোঝায় প্রেম ও ভক্তির মাধ্যমে ঈশ্বরের কাছে ভক্তের সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ। এই ভক্তি আদর্শের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে ভক্তিবাদ। আক্ষরিক অর্থে ভক্তিবাদের মূলকথা হল, ভক্তের সঙ্গে ভগবানের অতীন্দ্রিয় মিলন।
মূল আদর্শ: ভক্তিবাদ বিকশিত হয়েছিল ঈশ্বরের প্রতি প্রেম ও ভক্তি আদর্শের ওপর ভিত্তি করে। ভক্তিবাদীদের মূল আদর্শগুলি হল-
প্রেম ও ভক্তি: ভক্তিবাদীরা বিশ্বাস করতেন একমাত্র প্রেম, ভক্তি ও আত্মনিবেদনের মাধ্যমে ঈশ্বর লাভ সম্ভব।
একেশ্বরবাদ: ভক্তিবাদী সাধকরা মনে করতেন ঈশ্বর এক ও নিরাকার। অর্থাৎ তাঁরা একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী ছিলেন।
জাতিভেদ বিরোধিতা: ভক্তিবাদী সাধকরা ছিলেন জাতিভেদ বা বর্ণভেদ প্রথার ঘোরবিরোধী। কবীর, নানক, শ্রীচৈতন্যদেব প্রমুখ ভক্তিবাদী সাধকরা জাতি বা বর্ণভেদ প্রথার তীব্র বিরোধিতা করে তাঁদের ভক্তিবাদী আদর্শ প্রচার করেছিলেন। ভক্তিবাদী সাধকদের অনেকেই ছিলেন নিম্নবর্ণের মানুষ।
মূর্তিপূজার বিরোধিতা: ভক্তিবাদী সাধকরা ছিলেন মূর্তিপূজার ঘোরবিরোধী। ভক্তিবাদী সাধক নামদেব বলতেন- 'তুর্কিরা পাথরের দেবদেবীকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করলেও তাদের আর্তনাদ শোনা যায়নি।'
মূল্যায়ন: সবশেষে বলা যায় যে, ভক্তিবাদের মূল বক্তব্যই হল ঈশ্বরের প্রতি প্রেম ও ভক্তি নিবেদনের মাধ্যমেই তাঁর সান্নিধ্য বা করুণালাভ সম্ভব। ভক্তিবাদীরা তাই ধর্মের বাহ্যিক আচার-অনুষ্ঠানের ঘোরবিরোধী ছিলেন।
0 Comments: